নবম শ্রেণীর তৃতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
বর্তমান করোনার ন্যায় পরিস্থিতি অর্থাৎ স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব না হলে ই-লার্নিং এর সাহায্য নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব?তোমার প্রস্তাবনা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ কর।
বর্তমান করোনার ন্যায় পরিস্থিতি অর্থাৎ স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব না হলে ই-লার্নিং এর সাহায্য নিয়ে যেভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব সে সম্পর্কে আমার প্রস্তাবনা প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হলোঃ
ভূমিকাঃবর্তমানে আমরা সবাই বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি।এখন সারা বিশ্বই করোনা নামক মহামারির করাল গ্রাসে জর্জরিত।এমতাবস্থায় আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।যার ফলে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে,অনেক ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ছে।এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ই-লার্নিং অনেক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
করোনাকালে স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম চালু না রাখার যৌক্তিকতাঃবর্তমানে বিশ্বের বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো করোনার ঢেউ মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে,সাথে সাথে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনা মোকাবেলা করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে আমরা সেখানে অনেক নগন্য অবস্থানে আছি। তাছাড়া আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যধিক।কাজেই আমাদের জন্য করোনা মোকাবেলা প্রায় অসম্ভব। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা একটা ভালো অবস্থানে আছি।আমাদের দেশে করোনা তেমন ছড়াতে পারেনি।তবুও প্রতিদিনই দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য দুঃসংবাদ।এখন যদি স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম চালু রাখা হয় তবে আমাদের কি অবস্থা হবে তা নিশ্চয়ই সবাই অনুমান করতে পারছে।উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার কথাই ধরা যাক।তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব কম ও নাগরিকরা সচেতন।কিন্তু তাদের দেশে যখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছিল তারপরেই সেখানকার ৫০ হাজার শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল।অর্থাৎ আমাদের দেশ কোন পর্যায়ে যাবে তা আমরা সবাই অনুমান করতে পারছি।কাজেই বর্তমান করোনাকালীন সময়ে স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম চালু রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ খুজে পাচ্ছি না।
ই-লার্নিং এর ধারণাঃশিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানকারীর অপর নাম ইলেকট্রনিক লার্নিং বা ই-লার্নিং;যা সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের পরিপূরক।বিভিন্ন শিক্ষাবিষয়ক সমস্যার সমাধান,ব্যবহারিক বিষয়গুলোর দৃশ্যমান উপস্থাপন ও পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় ই-লার্নিং।
ই-লার্নিং এর সুবিধাসমূহঃ
১। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট করা যায়।
২।শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে তারা ই-লার্নিং এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে।
৩।ই-লার্নিং এর মাধ্যমে ঘরে বসেই যে কেই চাইলেই বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করতে পারে।ইত্যাদি।
ই-লার্নিং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেন্জসমূহঃই-লার্নিং বাস্তবায়ন করার জন্য যে অবকাঠামোগত সক্ষমতা থাকা দরকার তা আমাদের নেই।যদিও বর্তমানে এসব অবকাঠামো গড়ে উঠতে শুরু করলেও তা অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে।কাজেই আমাদের Leap Frog এর মাধ্যমে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হবে।ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে আরও অনেক চ্যালেন্জ রয়েছে।এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি চ্যালেন্জ হলোঃ
১।ইন্টারনেটের স্পিড দেশের সব জায়গায় সমান না।
২।ই-লার্নিং এর জন্য যে আর্থিক সক্ষমতা থাকা দরকার তা আমাদের নেই।ইত্যাদি।
আমরা যত তাড়াতাড়ি এসব চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে পারব তত তাড়াতাড়ি আমাদের দেশে ই-লার্নিং এর একটা মজবুত ভিত গড়ে উঠবে।এরই সাথে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
ই-লার্নিং এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনঃ
ই-লার্নিং এর মাধ্যমে বহুবিধ দক্ষতা অর্জিত হয়।শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আইসিটি যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠে।শিক্ষকেরা তাদের পড়ানোর বিষয় আরও দক্ষ হয়ে উঠে।তাছাড়া আজকাল এমন অনেক বেকার শিক্ষিত লোক আছেন যারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট,ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদি খুলে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।একই সাথে বেকারত্বের হারও কমছে।অর্থাৎ ই-লার্নিং এর মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি অনেকভাবেই দক্ষ হয়ে উঠছেন।
স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষায় সহায়তা হিসেবে ই-লার্নিং এর সম্ভাবনাঃআমরা বর্তমান করোনাা পরিস্থিতি পার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।স্বাভাবিক সময়েও ই-লার্নিং শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে।শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর সময় অনেক কিছুই হাতে কলমে দেখানো সম্ভব নয়।ই-লার্নিং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্ন বিষয়ের Interactive ভিডিও দেখানো সম্ভব।ই-লার্নিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব।
উপসংহারঃবর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ত বন্ধ রাখা যায় না।সেজন্য আমাদের ই-লার্নিং ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।তাই ই-লার্নিং পদ্ধতির বিকাশে আমাদের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যবই(নবম দশম শ্রেণী),উইকিপিডিয়া,গুগল