১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর? যুক্তিসহ তােমার মতামত তুলে ধর
১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর? যুক্তিসহ তােমার মতামত তুলে ধর?
Share
১৯৫২ সালের ভষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাস বিনিমার্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নিচে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ আলোচনা করা হলঃ-
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনঃ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি হচ্ছে ১৯৫২ সালের আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলন সুসংহত হয় এবং অগ্রগতি লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাই জনগণের মধ্যে পরবর্তীকালে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটায় এবং এর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর অনুকরণে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘােষণা প্রদান করেন। উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করার প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ৩০ শে জানুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নতুন ভাবে গঠিত হয়। নতুনভাবে আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলাে ও যুক্ত হয়। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং ঐদিন রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ভাষার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘােষণা করা হয়। কারাবন্দি নেতা শেখ মুজিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ শে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি পালনে ছাত্র ও আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীদের ডেকে পরামর্শ দেন। দেশব্যাপী জনমত গড়ে উঠতে থাকে। ২০ শে ফেব্রুয়ারি সরকারি এক ঘােষণায় একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সভা-সমাবেশ-মিছিল এক মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের পাশে) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীগণ। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি বর্ষণ করলে আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহিদ হন। ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবর দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২২ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশাল শােক র্যালি বের হয়। সেখানে পুলিশের হামলায় শফিউর রহমান শহীদ হন। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলায় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা মূল ধারার রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে।
১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবিঃ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য স্বায়ত্তশাসন এর গুরুত্ব নতুনভাবে উপলব্ধি করে। উপরােক্ত ঘটনাবলি এবং আইযুব খানের নির্যাতন – নিপীড়নের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলেন। পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরুদ্ধে ৬ দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবি সুস্পষ্ট রূপ লাভ করে।
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ই ফেব্রুয়ারি লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে যােগদান করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরে। আইয়ুব সরকার একে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি হিসেবে আখ্যায়িত করে। এ কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনা মুলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ছয় দফা কর্মসূচি বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার মন্ত্রে গভীরভাবে উজ্জীবিত করে। এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ছয় দফা কর্মসূচি ঘােষণার জন্য পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং পাকিস্তানের এক নম্বর শত্রু বলে চিহ্নিত করে। পাকিস্তান সরকার দুফা গ্রহণ না করে দমন-পীড়ন শুরু করলে আন্দোলন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনঃ ১৯৬৯ সালের ২৫ শে মার্চ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফালেকশন। উক্ত পদে আসীন হন। তিনি ২৮ শে মার্চ এক ঘােষণায় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এক ব্যক্তির এক ভােটের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলিম লীগ (কাইয়ুম), মুসলিমলীগ (কনভেনশন), পাকিস্তান-পিপলস পার্টি, মােক্রেটিক
পাটি, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি দল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে ৫ কোটি ৬৪ লাখ ভােটারের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ববাংলার জন্য নির্ধারিত ১৬৩টি আসনের ১৬০টি আসন লাভ করে। সংরক্ষিত মহিলা আসন ৭ টি সহ আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসন লাভ করে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সংরক্ষিত দশটি মহিলা আসন সহ মােট ৩১০ টি আসনের মধ্যে আওয়মী লীগ ২৯৮ টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ বিজয় ছিল নজিরবিহীন।
নিজস্ব মতামতঃ উল্লেখিত ঘটনাগুলাের মধ্যে ১৯৭০ সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে আমি মনে করি। নিচে আমার মতামতের যথার্থতা আলােচনা করা হল।১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। তারা বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরােধিতা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম-পাকিস্তানের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পিছনে নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র দানে বিশাল ভুমিকা রাখে। পরিণতিতে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
২০২১ সালের ৯ম শ্রেণির ১ম সপ্তাহের বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর গুলো দেখতে
এখানে ক্লিক করুন
৯ম শ্রেণির ১ম সপ্তাহের বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর
দেখতে এখানে ক্লিক করুন