৯ম শ্রেণির ২য় সপ্তাহেরে ফিন্যাস ও ব্যাংকিং অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ
নিবন্ধ রচনা:
“অর্থায়নের ক্রমবিকাশ”
নিবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে ভূমিকা, অর্থায়নের
ধারণা, ক্রমবিকাশ এবং উপসংহার
লিখতে হবে।
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
ভূমিকাঃ
অর্থায়নের পরিধি অনেক বিস্তৃত। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থায়ন অতি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ ছাড়া যেমন আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের আর্থিক কার্যাবলী সম্পন্ন করা যায় না ঠিক তেমনিভাবে কোনাে প্রতিষ্ঠানও
অর্থ ছাড়া চলতে পারে না। তাই অর্থকে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জীবনীশক্তি
বলা হয়। সাধারণত অর্থ বলতে নগদ অর্থ বা ব্যাংকে জমা করা অর্থকে বােঝানাে
হয়। কিন্তু ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে অর্থ বলতে শুধু নগদ অর্থকে বােঝায় না,
অর্থাকারে প্রকাশিত যেমন: চেক, শেয়ার, বন্ড বা ঋণপত্র, প্রাপ্য বিল, প্রাইজবন্ড
ইত্যাদিও অর্থের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ, অর্থ ব্যবস্থাপনা,
বিনিয়ােগ, সংরক্ষণ এবং এ সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যাবলিকে অর্থায়ন বলা হয় ।
অর্থায়নের ধারণাঃ
অর্থায়নের মূল কাজ হলাে তহবিল সংগ্রহ ও তার ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়ােগ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থের প্রয়ােজন। আর ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড়া সম্পূর্ণ অচল। এ জন্যই অর্থায়নকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের
হৃদপিন্ড বলা হয়। সাধারণভাবে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাকে অর্থায়ন বলা
হয়। একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মূলধন প্রয়ােজন, কোন
কোন উৎস হতে তা সংগ্রহ করার জন্য লাভজনক এবং কোন প্রজেক্ট
সম্পদে বিনিয়ােগ করলে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হবে, সেই সকল বিষয়ের
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের যে কার্যাবলী তাকেই অর্থায়ন বলে।
অর্থায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন মনিষীদের উক্তি
Lawrence J. Gitman 97 166 “Finance can be defined as
the art and science of managing money. It is concerned
with the process, institutions, markets, and instruments
involved in the transfer of money among individuals,
businesses, and governments.”
Schall and Halley 43 260 “Finance is a body of facts,
principles and theories dealing with raising and using of
money by individuals, businesses, and governments.
আর. এ. স্টিভেনসন এর মতে “অর্থায়ন বলতে সেই উপায়কে বুঝায় যা দ্বারা
তহবিল সংগ্রহ করা যায় এবং তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও বন্টন সম্ভবপর হয়।”
অর্থায়নের ক্রমবিকাশ
পূর্বে তহবিল সংগ্রহ করাই অর্থায়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালের বিবর্তনে অর্থেও
ব্যবহারটি অর্থায়নের আওতাভুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তনশীল পরিবেশ
পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমান অর্থায়নের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত দ্রব্য বিনিময়
প্রথার অসুবিধা দূর করার জন্য অর্থের সূচনা হয়- এই কথাটি আমরা সকলেই
জানি। সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উৎপাদন কৌশল উন্নত বিশ্বে শিল্প
বিপ্লব হয়। এতে উৎপাদন কৌশল জটিলতর হয় এবং বিশেষায়িত প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া উৎকর্ষতা লাভ করে। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে
প্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আর্থিক ব্যবস্থাপকদের দায় দায়িত্ব
পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থায়নের মূল বিকাশ ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে পরে তা সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে পরে। নিচে অর্থায়নের বিবর্তনের বিষয়টি আলােচনা করা হলাে-
১৯৩০ এর পূর্ববর্তী দশক
এই সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানীগুলাের মধ্যে একত্রীকরণের প্রবণতা শুরু হয়।
আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে কোন প্রতিষ্টানের সাথে কোন প্রতিষ্টান একত্রিত
হওয়া উচিত এই সংক্রান্ত রূপরেখা দিতে আর্থিক ব্যবস্থাপকদের দায়িত্ব পালন
করতে হয়। তারা এই একত্রীকরণে বিশাল অংকের অর্থসংস্থান ও আর্থিক বিবরণী
তৈরি করার দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩০ এর দশক
একত্রীকরণ প্রক্রিয়া স্বল্পকালে লাভজনক হলেও দীর্ঘকালে আশানুরূপ সফলতা
পায়নি। আগের দশকে একীভূত অনেক প্রতিষ্ঠানই পরের দশকে দেউলিয়া হয়ে
যায়। সে কারণে ত্রিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চরম মন্দা শুরু হয়। শুরু হল বাঁচার
জন্য লড়াই। শুরু হল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলাে পুনর্গঠন করে কীভাবে দেউলিয়ার্তু
থেকে রক্ষা করা রাখা যায়, সে ব্যাপারে আর্থিক ব্যবস্থাপক বিশেষ দায়িত্ব পালন
করেন। এ সময় থেকেই শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থায়নের প্রয়ােজন দেখা দেয়।
১৯৪০ এর দশক
এ সময়ে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য তারল্যের প্রয়ােজনীয়তা বিশেষভাবে
উপলব্ধি করা যায়। নগদ অর্থপ্রবাহের বাজেট করে সুপরিকল্পিত নগদপ্রবাহের
মাধ্যমে অর্থায়ন সেই দায়িত্ব পালন করে।
১৯৫০ এর দশক
১৯৫০ এর দশকে অর্থায়নের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। তহবিল সংগ্রহ
করে কিভাবে তা লাভজনক খাতে বিনিয়ােগ করে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা যায়
তা অর্থায়নের প্রধান কাজ হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। মূলধন বাজেটিং নতুন
বিনিয়ােগ প্রকল্প সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল ও পদ্ধতির আবির্ভাব হলাে যা
ব্যবসায়ের মূলধনের দক্ষ বন্টনের কাজকে ত্বরান্বিত করতে সহযােগিতা করলাে।
১৯৬০ এর দশক
১৯৬০ এর দশকে আধুনিক অর্থায়নের যাত্রা শুরু। অর্থায়ন শেয়ার বা মূলধন
বাজারকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে। একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহােল্ডারদের
সম্পদ বা শেয়ারের বাজারমূল্য সর্বাধীককরণই ছিল এই সময়ের অর্থায়নের
অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু অর্থায়নের সাথে ঝুকির সম্পদটি তেমন বিবেচনায় নেওয়া
হয়নি। অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকির ধারণা হলাে এই যে মুনাফা বৃদ্ধির সাথে সাথে
ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মুনাফা সৰ্বাদীককরণ সর্বদা কাঙ্ক্ষিত নাও হতে পারে।
১৯৭০ এর দশক
এই সময় কম্পিউটারের যাত্রা শুরুর ফলে বদলে যারা অর্থায়নের কাজ। অর্থায়নও
তখন অংকনির্ভর হয়ে উঠে। মূলধনি কাঠামাের সনাতন ধারণাও অনেক
অংকনির্ভর ও জটিল হয়। তাত্ত্বিক অর্থায়নকে নানা তত্ত্বের বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ করেন
হ্যারি মার্কোইজ, মার্টন মিলার, ফ্রাংকো মডিগলিয়ানি।
১৯৮০ এর দশক
কম্পিউটার প্রােগ্রামের সাহায্য স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিশ্লেষণের ক্ষেত্র
বেড়ে যায়। এই সময়ে আর্থিক সেবা শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে সরকারি
বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। একজন আর্থিক ব্যবস্থাপককে তহবিল সংগ্রহ, বন্টন
বিনিয়ােগ ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং মূল্যায়নে সহযােগিতা করেছে।
১৯৯০ এর দশক ও আধুনিক অর্থায়নের সূচনা
এই দশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization) প্রতিষ্ঠিত
হয়। বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানির উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা ও বিধিনিষেধ
ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয়। যার ফলে অর্থায়নও আন্তর্জাতিকতা লাভ করে। তথ্য
প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের যুগে অর্থয়নের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হতে থাকে।
উপসংহার
অর্থায়নকে প্রতিষ্ঠানের হৃদপিণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়। তাই অর্থায়ন প্রক্রিয়া
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এমনকি
ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থায়ন গভীরভাবে জড়িত।
প্রতিবছর সরকার আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলিত হিসাব করে বাজেট প্রেস করে। সরকারের
বার্ষিক আয় কোন কোন উৎস হতে সংগ্রহ করা হবে এবং বার্ষিক ব্যয় কোন কোন
খাতে কী পরিমাণে করা হবে তা নির্ধারণ করাকে সরকারি অর্থায়ন বুঝায়। প্রতিটি
সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যবস্থাপনা আছে। সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের
পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা
হয়। সরকারি অর্থায়নে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত বাজেটের মাধ্যমে
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। যখন সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা
ব্যয় বেশি হয় তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। আবার সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে
ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হয় তখন তাকে তখন তাকে উদ্ধৃত্ত বাজেট বলে।
সরকারি অর্থায়নের মূল লক্ষ্য হলাে সমাজকল্যাণ।