রুহি তার বাবার সাথে শেরপুর বেড়াতে গেলাে। যাওয়ার পথে স্থানীয় একটি বাজারে নাস্তা খেতে নামলাে। সে দেখলাে রাস্তার পাশে বার্শ ও বেতের তৈরি সুন্দর সুন্দর ঝুড়ি, কুলা, চেয়ার, দোলনা, ফুলদানি বিক্রি করছে।
রুহি বাবাকে বলে দুটো ফুলদানি কিনলাে। রুহির বাবা বললাে এভাবেই স্থানীয়ভাবে তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে হাজার হাজার লােকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং পর্যটকদের নিকট এগুলাের চাহিদাও ব্যাপক।
বর্তমানে সরকার এ খাতের নারী উদ্যোক্তাদের দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করছে।
ক. ব্যবসায় পরিকল্পনা কী?
খ. সেবামূলক ক্ষুদ্র শিল্প বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত পণ্যগুলাে কোন শিল্পের অর্ন্তগত বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্য মতে এ খাতের বিকাশ সম্ভব বলে মনে করাে কী? মতামত দাও।
(ক) ব্যবসায় পরিকল্পনাঃ কোনো কাজ করার পুর্বে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনা বলে । ব্যবস্যার পরিকল্পনা একটি লিখিত দলিল , যার মাধ্যে ব্যবসায়ের লক্ষ্য , প্রকৃতি , ব্যবস্থাপনার ধারা , অর্থায়নের উপায় ,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্পুর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়
( খ ) সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত শিল্পকেই সেবা শিল্প বলে ।যে ব্যবসায় সংগঠন স্বল্প মূলধন ও জনগণ নিয়ে গঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে । সেবামূলক ক্ষুদ্র শিল্পের মূলধন 5 লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা । শ্রমিক সংখ্যা 10 থেকে 25 জন ।
(গ) রুহির দেখা বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে ঝুড়ি , কলা , চেয়ার , দোলনা , ফুলদানি ইত্যাদি শিল্প গুলো কুটি শিল্পের অন্তর্গত । নিচে এ শিল্প সম্বন্ধে আলোচনা করা হলোঃ
যে শিল্প পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় অল্প মূলধন ও সীমিত আয়তনে গড়ে উঠে সে শিল্পকে কুটির শিল্প বলা হয়। জমি ও কারখানা ছাড়াও শিল্পী স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫ লক্ষ টাকার কম হয় । এ শিল্পে শ্রমিক সংখ্যা পরিবারের সদস্যসহ সর্বোচ্চ ১০ জন । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অগ্রগতির কুটির শিল্পের ভূমিকা ইতিবাচক । দেশের প্রায় ৯৬ ভাগ শিল্প কুটির শিল্পের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে । দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে হচ্ছে কুটির শিল্প ।দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য লালন ও বিকাশেও সব শিল্পের ভুমিকা অত্যন্ত উজ্জ্বল । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কুটির শিল্পের অবদান অপরিহার্য ।
(ঘ) বাংলাদেশ কুটির শিল্পের বিকাশের করণীয় কার্যক্রম হলো কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও নিশ্চিতকরন , শ্রমিকের পর্যাপ্ত যোগান ও বৈদেশিক চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদি । কাঁচামালের সহজলভ্যতা কোন শিল্প গঠনের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা পালন করে । শ্রমিকের যোগান পর্যাপ্ত হলে শিল্পের উৎপাদন ও পরিচালনা সহায়তা হয় । এছাড়াও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করে । এ দেশের ৯৬ ভাগ শিল্প কুটির শিল্পের আওতাভুক্ত বলে এ সব শিল্পে বিপুল পরিমান কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করে । কোনো শিল্প প্রতিষ্টার পরিকল্পনা থেকে তা পরিচালনা ও বিকাশে কিছু উপাদান গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে । কাঁচামালের সহজলভ্যতা শ্রমিকের পর্যাপ্ত যোগাযোগ উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা প্রভৃতি এইসব উৎপাদনে অন্তর্ভুক্ত । কাঁচামাল সহজলভ্য হলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাজ সহজ হয়ে যায় । আর শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও পরিচালনা অব্যাহত রাখতে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয় । ফলে প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন হয় ও ব্যয় কমে যায় । আবার পণ্য শুদু উৎপাদন করলেই হয়না , এর বিপণনও জরুরি । এজন্য স্থানীয় বৈদেশিক চাহিদা বাড়ানো দিকে নজর দিতে হবে । এছাড়া ও শিল্পের বিকাশে পুজির সহজ যোগান , পরিবহন সুবিধা , বাজের নৈকট্য সহায়ক ভুমিকা রাখে । উপরক্ত কথা গুলো থেকে আমরা বাংলাদেশের কুটির শিল্পের বিকাশের করণীয় কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারি । উপরিক্ত কাজগুলো সঠিকরুপে সম্পর্ণ করলে কুটির শিল্পের খাতের বিকাশ ঘটানো সম্ভব বলে আমার মনে হয় ।